জমিতে চাষ হয় বিশেষ জাতের ধান

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘পারিজা’ ধান হতে পারে মক্ষম হাতিয়ার। এই বিশেষ জাতের ধান ঘরে তুলতে প্রয়োজন হয় মাত্র ৭০ থেকে ৮০ দিন। এই চাষে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় অন্যান্য ফসলের তুলনায় প্রায় অর্ধেক, আবার সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না ক্ষেতে।

হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় প্রায় ৩ টন। আমন, বোরো, ইরি ইত্যাদি ধান হেক্টর প্রতি ফলন হয় ২ থেকে ২.৫ টন। প্রতি একর জমিতে ইরি চাষে খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা, বোরো ধান চাষেও খরচ হয় প্রায় সমপরিমাণ অর্থ। আমনে কৃষকদের গুনতে হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। তবে বাংলাদেশি প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত পারিজা ধানে খরচ হয় মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি তিন মাস লাখ লাখ কৃষি শ্রমিক শ্রমহীন মানবেতর দিন কাটান। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে পারিজা ধান। জুন মাসের শুরু থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত পতিত জমিতে চাষ হয় এই বিশেষ জাতের ধান।

পতিত না থেকে নিয়মিত চাষ হওয়ার কারণে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হচ্ছে। চলতি বছর রংপুর বিভাগের ৮টি জেলা সহ মোট ১১টি জেলায় গত তিন বছর যাবৎ পারিজা ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রায় ৫ হাজার কৃষক পরিবার এই চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং কৃষি শ্রমিক প্রয়োজন হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার।

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার কৃষক আফজালুর রহমান বলেন, আগে অনাবাদি থাকতো জমি। কখনো শাক-সবজি চাষ করতাম তবে বৃষ্টির কারণে তার ফলন আশানুরূপ হতো না। কিন্তু গত তিন বছর যাবৎ পারিজা ধান চাষ করে বাড়তি আয় হচ্ছে। কথা হয় একই এলাকার কৃষি শ্রমিক মিজানের সঙ্গে।

তিনি জানান, বোরো-আমনের মৌসুমের মাঝামাঝি সময় ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতেন বা ইটভাটায় কাজ করতেন। কিন্তু তিন বছর ধরে আর প্রয়োজন হয় না বাইরে যাবার। কারণ নিজের এলাকায় মিলছে কাজ।
রংপুর কৃষি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা মো. লাবলু বলেন, পারিজা ধান চাষে বাম্পার ফলন আসছে প্রতি বছরই।

পুরোপুরিভাবে এই চাষ চালু হলে শুধুমাত্র রংপুর বিভাগ থেকে উৎপাদন করা সম্ভব ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চাল। সারা দেশে চাষ করা গেলে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৯০ লাখ টনে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব এই চাল।

পারিজা ধান চাষের সময় সাধারণত বৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ধানের আরেক গুণ হচ্ছে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবার ক্ষমতা। বৃষ্টির পানিতে জমি থই থই করলেও এই ধান গাছের শীষ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পানির উপর মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এই ধান গাছ সাধারণত শক্ত হয়। দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও পচন ধরে না।

এই ধানের বীজের জন্য কোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে হয় না কৃষকদের। কারণ চাষিরা স্থানীয় বাজার থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারছেন বীজ। আবার অনেক কৃষক নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করে আয় করছেন বাড়তি অর্থ।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর